সোনারদেশ২৪: ডেস্কঃ
‘করোনা মহামারির মধ্যে অন্যান্যখাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাণিসম্পদ, ডেইরি এবং মৎস্যখাত। সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায়ও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সেই ক্ষতি অনেকটা কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রাণিসম্পদ, ডেইরি এবং মৎস্যখাত উন্নয়নে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাটির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও। ফলে বাংলাদেশ এখন মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। ’
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ-কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এসব মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক আমানুর রহমানের সঞ্চালনায় ‘মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুর্নগঠন ও প্রাণিসম্পদখাত পুনরুদ্ধার’ বিষয়ে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রাণিসম্পদ ও কৃষিখাতকে উন্নত করতে এবং দারিদ্র দূরীকরণে নানা চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, একটি পরিবার কয়েকটি হাঁস-মুরগি বা গবাদিপশু পালন এবং মাছচাষের মাধ্যমে একটু বাড়তি আয় করার চেষ্টা করছে। একাধারে এটি যেমন তার নিজস্ব আয়ের উৎস, সেসঙ্গে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। গত ১০ বছরে গরু ও ছাগলের খামারের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এই খাতটির পরিচর্যা খুব জরুরি। এ জায়গাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য কেয়ার যেভাবে সচেতন, এগুলো নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষগুলো, তাদের নিয়ে ভাবা উচিত। বিশেষ করে সরকারের একটি বড় ভূমিকাও এখানে আমরা আশা করি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার বলেন, বাংলাদেশ এখন মাংসে স্বয়ংসম্পর্ণ। এখন আর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না। এই অবস্থায় আসতে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিওসহ সবার সহযোগিতা রয়েছে। আমাদের দেশে এবার দুধ উৎপাদন ১০৬ কোটি মেট্রিক টন। ডিম হয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি। যেটা স্বাধীনতার পর পর ছিল মাত্র ১১৫ কোটি। সুতরাং এ খাতে সরকারের সু-দৃষ্টি আছে বলেই এত উন্নতি এসেছে। বেসরকারি সেক্টরের যারা এ খাতের সঙ্গে যুক্ত, তারাও কাজ করে যাচ্ছে। এখন দেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজ এ খাতে জড়িত হচ্ছে, আশা করছি সামনে এখাতে আরও উন্নতি আসবে।
বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সোহেল ইবনে আলী বলেন, সুইজারল্যান্ড সরকার প্রায় ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে। আজকের এই আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত।
কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিং বলেন, করোনা মহামারি এখনো শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ করোনার দ্বিতীয় ধাপ (সেকেন্ড ওয়েভ) মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও করোনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং এই মহামারি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। কিছুদিন পর এই মহামারি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এই মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য এখনই কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
কেয়ার বাংলাদেশের তথ্যমতে, পশুপালন, কৃষি এবং সামাজিক সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে দেশের দরিদ্র, অনগ্রসর এবং সংখ্যালঘু পরিবারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমষ্টি’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের চারটি অঞ্চলের মোট ১৪টি জেলার ২৮টি উপজেলার এক লাখ ৮০ হাজার পরিবারে আয় বাড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় গরু মোটাতাজাকরণ, ডেইরি ও হাঁস পালন, চিংড়ি, শাক-সবজি এবং ফল চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে প্রান্তিক মানুষদের। এছাড়া এই খাতে দক্ষ জনবল তৈরি এবং সামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতেও কাজ চলমান রয়েছে। প্রাণী ও ডেইরি পণ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও বিপণন নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে নারীদের জন্য ১০টি মার্কেট স্থাপন করেছে কেয়ার বাংলাদেশ। এর বাইরে স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সঞ্চয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি। করোনা ভাইরাসের মধ্যে প্রান্তিক মানুষদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ‘সমষ্টি’ প্রকল্পের আওতায়। এর মধ্যে রয়েছে রংপুর অঞ্চলের দুই হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রংপুরের ছয় উপজেলার পাঁচ হাজার পরিবারকে সাড়ে চার হাজার টাকা নগদ অনুদান এবং আরও দুই হাজার ৮শ কৃষক এবং পাঁচ হাজার ২শ অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সমষ্টি প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের সুবিধাভোগী পাঁচ লাখের বেশি পরিবার প্রাণিজ ও ডেইরিখাতের পণ্য বিপণনের সেবা উন্নত করতে পেরেছেন যাদের অর্ধেকেই নারী। দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং পরিবারগুলোর প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অতিরিক্ত অর্থ আয় হয়েছে। ৪০৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ও সক্ষমতা বেড়েছে। প্রায় ২৮ হাজার পরিবার সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। প্রাণী ও ডেইরি খাতের পণ্যের বিপণন সহজতর করতে ১০টি বেসরকারি কোম্পানি এবং তিনটি সরকারি দপ্তরের সঙ্গে ইতোমধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। সাড়ে তিন হাজারের বেশি সুবিধাভোগীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে প্রায় দুই হাজার ২শ নারীও।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের’ প্রধান কারিগরি সমন্বয়ক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. এবিএম খালিদুজ্জামান, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহনাজ আক্তার শাহীন।