রবিবার, ১৯শে মে,
২০২৪

  • সারাদেশ ঢাকা

  • ‘অক্সিজেন ভাণ্ডার’ নিঃশেষ করে নির্মাণ হচ্ছে রিসোর্ট


    সোনারদেশ ২৪ ডেস্ক


    মঙ্গলবার, ৭ই মে,

    ২০২৪

    /

    23 বার পড়া হয়েছে


    a

    সোনারদেশ২৪: ডেস্কঃ


    ফরিদপুর শহরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট’ নির্মাণ করা হবে। জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তথা এলজিইডি। এ জন্য সেখানকার বহুবর্ষী ৩১টি গাছ কেটে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে গাছগুলো কাটার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেগুলোর গায়ে খোদাই করে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এতে লেকপাড়ের নিসর্গ পরিবেশ হারিয়ে যাবে। 

    ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট প্রকল্প পাস হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত চেষ্টায় প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এই টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিল্ড্রেন ওয়াটার গেইম, চিল্ড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার, বোর্ট ল্যান্ডিং ক্যাফে ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার তৈরি হবে। পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদ আগামী একমাসের মধ্যে এই রিসোর্ট নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন। 

    ফরিদপুর জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত। এ লেকসহ আশপাশে সবমিলিয়ে ১৮ একর জমির উপর লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর এ কাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

    এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশিরভাগই মেহগনি। এর পাশাপাশি, আম, কাঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলোর বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। এরইমধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সময় সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। গত মঙ্গলবার (৭ মে) গভীর রাত থেকে শ্যালোইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। এ গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতঃভ্রমণ, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার স্থান এই লেকপাড়। বর্তমানে প্রচণ্ড দাবদাহে প্রতিদিন বিকেলে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে আসে। পাশাপাশি সারা বছরই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে লেকপাড়ে অলস ও অবসর সময় কাটাতে মানুষ আসে। 

    টেপাখোলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান বলেন, শৈশব থেকে এ গাছগুলো দেখে আসছেন। এখানকার লেকের স্বচ্ছ পানির সঙ্গে গাছগুলোর ছায়াময় পরিবেশ দারুণ নিসর্গের অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিকভাবে এটি সুন্দর বিনোদন স্পট হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এই গাছগুলো কেটে ফেললে পরিবেশ বদলে যাবে।

    স্বপন মৃধা নামে এক যুবক বলেন, ‘গাছগুলোর ছায়ায় আমাদের শৈশব কেটেছে। প্রচণ্ড গরমে স্বস্তির আশায় শুধু আমরা নই, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসে। এখন শুনছি, এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পরে মনে স্বস্তি পাচ্ছি না।’ 

    টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী এস এম মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘তীব্র গরমে শহরের মানুষ সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যায় এই গাছের তলায় বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আমার জানামতে, লেকের উন্নয়নে যে নকশা ও ব্যয় বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল, তা সংকুচিত করা হয়েছে। আর যেহেতু মূল নকশা অনুযায়ী কাজটি হচ্ছে না, তাই গাছগুলো রেখে নতুন করে নকশা করা উচিত। আমরা চাই, পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা হোক।’ 

    একই এলাকার বাসিন্দা সজিব মিয়া বলেন, এই গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভাণ্ডার। এলাকার সব পর্যায়ের মানুষ এ গাছ তলার এসে বিশ্রাম নেয়। সকলের উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

    ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘গাছগুলো রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে, গাছগুলো রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলো কেটে ফেলার যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখছি না।’ 

    ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, ‘কোনো যুক্তিতে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলো অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। বড় বড় এ গাছগুলো কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।’ 

    ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাকাহীদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় গাছগুলো রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়।’ 

    তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি ১ হাজার ৭৬২টি গাছ রোপন করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে।


    সংবাদটি শেয়ার করুন


    সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জিয়াউল হক
    নির্বাহী সম্পাদকঃ মোস্তাক আহম্মেদ নওশাদ


    যোগাযোগ- মুজিব সড়ক, কমিউনিটি হাসপাতাল ৫ তলা, সিরাজগঞ্জ
    ইমেইল- sonardesh24.corr@gmail.com
    মোবাইল : 01324 977 175, 01716-076444




    Copyright © 2024 - All right reserved by Sonar Desh 24 Ltd