২০২৫
16 বার পড়া হয়েছে
পাহাড়ি জাতিসত্তার মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি দেওয়া আইন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০’ বাতিলের বিরুদ্ধে বান্দরবান শহরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা মানববন্ধন করেছেন। একই সঙ্গে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ মামলায় এ আইনে অন্তর্ভুক্ত আদিবাসীদের বিশেষ অধিকার হরণে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লেকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন বান্দরবানে দুই হাজারেরও বেশি ১১টি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী, প্রথাগত বিভিন্ন সামাজিক ও সম্প্রদায়ের ছাত্র সংগঠন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসীদের অধিকার সম্বলিত যে আইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন সংক্রান্ত প্রধান আইনি দলিল হিসেবে দীর্ঘকাল থেকে কাজ করে চলেছে। তাই পার্বত্য অঞ্চলে সুশাসন, ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠিদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা হিসেবে এই আইন বহাল রাখার দাবি জানান প্রধানমন্ত্রীর নিকট।
মানববন্ধন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০-এ অন্তর্ভুক্ত আদিবাসীদের বিশেষ অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল আইনের সংক্ষিপ্ত বিবরণে দেখা যায়, ব্রিটিশশাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সামাজিক বিচার, ভূমি, রাজস্ব এবং অন্যান্য প্রশাসনের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি, এ প্রবিধানটির মাধ্যমে সামাজিক আইন-বিচারের মতো মামলার প্রক্রিয়াও নির্ধারণ করে। এ অঞ্চলের প্রথা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সার্কেল চিফ তথা রাজা, হেডম্যান, কারবারি এবং সমাজে প্রবীন ব্যক্তিরা প্রধান ভূমিকা দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের একটি বিভাগীয় বেঞ্চ ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনকে ‘মৃত আইন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে এ আইনকে ‘জীবিত ও বৈধ’ হিসেবে বলবৎ রাখেন। ২০১৮ সালে রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় বসতিস্থাপনকারী আব্দুল আজিজ আখন্দ এবং আব্দুর মালেক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল রিভিউ পিটিশনের শুনানিতে ওই আইনের ১০টিরও অধিক অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে লিখিতভাবে প্রার্থনা করেন।
গত ৯ মে মামলাটি শুনানির তালিকায় আসলে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আবারও তার পূর্বের আবেদনের ভিত্তিতে ওই আইনে শব্দ, বাক্যাংশ ও অনুচ্ছেদ বাতিল করার জন্য প্রার্থনা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, ১৯০০ (১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের আইন-১); যা পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল নামে অধিক পরিচিত। এটি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত সরকার প্রণীত একটি আইন, যা মূলত বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে; সেই সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে তৈরি।