২০২৪
9 বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো আসা জাহাজের কনটেইনারগুলোতে কি ছিল-সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ শোরগোল চলছে কদিন ধরেই। পাশের দেশ ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গুঁজবও কম ছড়ায়নি। তবে সেই সব প্রশ্নে যেন দাড়ি বসানো যায় এবার! পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু যে জাহাজের মাধ্যমে সেই ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’-ভর্তি ছিল শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্যে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজাটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার নামানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে বাকি ৭৩ একক কনটেইনার।
শিপিং ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আসা কনটেইনারগুলোতে ছিলো শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। পাকিস্তানের ১৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ছয় হাজার ৩৩৭ টনের এসব পণ্য সরবরাহ করেছে। এসব কনটেইনারের ১১৫টিতে ছিল সোডিয়াম কার্বনেট সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। খনিজ পদার্থ ডলোমাইট রয়েচে ৪৬ কনটেইনারে। এছাড়া ৩৫ একক কনটেইনারে চুনাপাথর, ছয় কনটেইনারে ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ ১০ কনটেইনারে, ২৮ কনটেইনারে শতভাগ রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি। এছাড়াও একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য আমদানি করেছে।
ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ৪২ একক কনটেইনারে ৬১১ টন পেঁয়াজ, ১৪ একক কনটেইনারে আনা হয়েছে ২০৩ টন আলু। ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর হিমায়িত কনটেইনারে এসব পেঁয়াজ-আলু এনেছে। এছাড়া একই জাহাজে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা কনটেইনারে রয়েছে খেঁজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন ইত্যাদি পণ্য। একটি কনটেইনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন।
কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে দিয়ে জাহাজটি গত মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যেই আমদানিকারকেরা পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস প্রক্রিয়া শুরু করার কথা।’
এতদিন ধরে পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজে বাংলাদেশে পণ্য আসতো না। পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রথমে জাহাজে করে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের
বন্দরে নেওয়া হতো চট্টগ্রামমুখী কনটেইনার। পরে এসব বন্দর থেকে চট্টগ্রামমুখী ফিডার জাহাজে সেসব কনটেইনার তুলে দেওয়া হতো। সরাসরি সেবা চালুর পর এখন করাচি থেকে জাহাজে বোঝাই করার পর কোনো বন্দরে ওই কনটেইনার নামানোর দরকার পড়বে না।
গত সোমবার পাকিস্তানের করাচি থেকে পণ্যবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পর করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে নোঙর করা প্রথম কোনো জাহাজ। এর মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয়।