২০২৫
23 বার পড়া হয়েছে
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরকীয়ার জেরে স্বামী মাহবুবুর রহমানকে (৩৮) হত্যার দায়ে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে আসামিদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক শারমিন হাসনাত পারভিন এ রায় দেন। আসামিদের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-ভৈরব উপজেলার চন্ডিবের উত্ততপাড়া গ্রামের নিহত মাহবুবের স্ত্রী রোখসানা আক্তার ও প্রেমিক একই গ্রামের আসিফ আহম্মেদ।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এপিপি সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ভৈরব শহরের চণ্ডিবের এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মাহবুব। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের এস এস ফিডার (লোকোশেড) পদে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় তার পরিবার ভৈরবে নিজ বাড়িতে বসবাস করত। মাহবুব প্রতি সপ্তাহে ভৈরবে এসে দুইদিন থেকে রোববার ঢাকায় চলে যেতেন।
ঘটনার দিন ২০১৯ সালের (২৭ নভেম্বর) গভীর রাতে ভৈরবের বাসায় তিনি খুন হন। তার স্ত্রী রোকসানা ভোরে চিৎকার করতে থাকেন স্বামী মাহবুবকে ডাকাতরা খুন করে পালিয়ে গেছে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা গিয়ে দেখেন বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাহবুবের মরদেহ পড়ে আছে। তার বুকে ছুরির আঘাত রয়েছে। এ সময় স্ত্রীর হাতে ছুরির আঘাত দেখা যায়। তখন স্ত্রী বলে ডাকাতরা তার স্বামীকে হত্যা করে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে স্ত্রী রোকসানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাহবুবের তিনটি সন্তান রয়েছে।
থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতির কোনো আলামত পরিলক্ষিত না হওয়ায় সন্দেহ পোষণ করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তার বাসার কাছে প্রতিবেশী কলেজ ছাত্র আসিফের (১৯) সঙ্গে তার প্রেম ছিল। পরে একদিন মাহবুব ভৈরবের বাসায় আসলে তারা দুজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ানোর পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। পরে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বুকে ছুরিকাঘাত করে মাহবুবকে খুন করেন আসিফ। পরে কিশোরগঞ্জ আদালতে তারা দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।
আদালত রায়ে বলেছেন, মাহবুবকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী এবং তারই প্রেমিক হত্যা করেছে, যা সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে। আদালত রায়ে বলেন, নিহত মাহবুবের তিনটি সন্তান ছিল। কিন্তু সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জঘন্যতম হত্যাটির পরিকল্পনাকারী ছিল তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। এ কারণে তাদের দুজনকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।
এ ঘটনায় ২০২০ সনের (৩০ মার্চ) পুলিশ দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। প্রায় পাঁচ বছর বিচার শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ আদালত দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।
মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এপিপি সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র দাস এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অশোক সরকার। মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই মো. হাবিবুর রহমান।