২০২৪
15 বার পড়া হয়েছে
আর দুই সপ্তাহ পরেই ঢাকায় বসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা। রীতি অনুযায়ী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে উদ্বোধন করা হবে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ)। এরই মধ্যে মেলার প্রায় ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজন সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরই বাণিজ্যমেলায় নতুন কিছু সংযোজন থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে সামনে রেখে সাজানো হবে মেলা প্রাঙ্গণ। আন্দোলনে নিহতদের সম্মান জানাতে থাকছে এবছর মেলায় ‘শহিদ আবু সাঈদ’ ও ‘মীর মুগ্ধ’ নামে দুটি কর্নার রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে যুবকদের জন্য একটি ‘ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন’ থাকবে। এছাড়া সিনিয়র সিটিজেনদের বসার জন্য একটি জায়গা রাখা হবে, সেখানে শুধু বয়স্করা বসতে পারবেন। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার থাকছে না ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ১৪৬তম বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট’র ৫৯তম পরিচালনা পর্ষদ সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথমদিন জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন বুধবার মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুরুর দিকে ২০২৫ সালের বাণিজ্য মেলা কবে নাগাদ শুরু হবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তা কেটে গেছে।
ইপিবি জানিয়েছে, গত কয়েক বছরের মতো এবছরও রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্যমেলার স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৫।
এরইমধ্যে বাণিজ্যমেলা আয়োজনের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তারা বলছেন, এবারের আসরে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সবমিলিয়ে স্টল থাকবে ৩৫০টি।
ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, এবারের মেলায় বিশেষ সুযোগ হিসেবে নারী উদ্যোক্তারা জন্য অপেক্ষাকৃত কম দামে স্টল বরাদ্দ থাকবে। যেখানে তারা তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। এছাড়া দর্শনার্থীদের ভোগান্তি এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রাখা হচ্ছে।
আর পুরো বাণিজ্যমেলা সাজানো হবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের থিমে। ইপিবির পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এ বছর মেলার প্রবেশদ্বারে ভিন্নতা আনা হচ্ছে। প্রবেশ দ্বারে থাকছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের থিম। এছাড়া পুরো মেলা প্রাঙ্গণে ইপিবির কর্মকাণ্ড তুলে ধরাসহ আর্থিক খাতের নানা বিষয় তুলে ধরা হবে।
এ বছর সশরীরে টিকিট কেনার পাশাপাশি এবারের মেলায় থাকছে অনলাইনে টিকিট ক্রয়েরও সুযোগ। প্রথমবারের মতো নেওয়া এ উদ্যোগের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে আমাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। ই-টিকিটিং হলে দর্শনার্থীরা মোবাইলে কিউআর কোড দেখিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। অনলাইনের এ সেবার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা যেখান থেকে খুশি অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।
মেলার প্রবেশমূল্য আগের মতোই রাখা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত প্রবেশমূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি, জানিয়ে বাণিজ্যমেলার পরিচালক বলেন, গত বছরের মতো এবারও মেলায় প্রবেশমূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা থাকছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এবারও থাকছে বিআরটিসির বাস সার্ভিস।
উল্লেখ্য, বাণিজ্যমেলায় দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাসব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের মেলার মাঠে। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা করা যায়নি। এরপর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা চলে যায় পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে। ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো স্থায়ী ভেন্যু বাংলাদেশ-চীন এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ২৯ তম বাণিজ্য মেলা সেখানেই আয়োজন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
সাধারণত জানুয়ারি মাসের প্রথমদিন থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে চলতি ২০২৪ সালের ২৮তম বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আশা করছি নতুন বছরের প্রথম দিন রাজধানীতে শুরু হবে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা। যেটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এবারের মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে ইপিবি। দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলো এবারের মেলায় তাদের উৎপাদিত পণ্যের সমাহার ঘটাবেন। আশা করছি আমরাও এবারের মেলা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রফতানি আদেশ পাবো।
তিনি জানান, মেলার নিরাপত্তায় ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ সেনাবাহিনী সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই বাসগুলো চলাচল করবে।