২০২৪
15 বার পড়া হয়েছে
আদানির পর কয়লা অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বন্ধের পথে রয়েছে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও।
দেশে কয়লা ভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে ৪টি, যেগুলোর প্রত্যেকটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াটের উপরে। আর ছোট ছোট ইউনিট রয়েছে ৪টি, যেগুলো একটি ৩০৭ মেগাওয়াট, ১টি ২৭৫ মেগাওয়াট ও ২টি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন।
এগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিমুখে থাকা ছোট ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া সবকটি কমবেশি জ্বালানি জটিলতায় ভুগছে। আমদানি নির্ভর কয়লা দিয়ে চালানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে জানা গেছে। কেউ টাকার অভাবে কেউ ডলারের সংকটে এলসি খুলতে পারছে না। যে কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কয়লার সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
কয়লা ভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাঁশখালীর নিয়মিত যোগান নিশ্চিত দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে। শনিবার আরেক জাহাজ কয়লা এসে পৌঁছেছে দেশে। বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট ও বড়পুকুরিয়া ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে। আংশিক উৎপাদনে রয়েছে বড়পুকুরিয়া ১২৫ মেগাওয়াট ও বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পায়রা ও রামপাল আংশিক উৎপাদন করলেও রামপালের কয়লার মজুদ চলতি সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে।
আমদানি নির্ভর কয়লা পাশাপাশি ভারতীয় কোম্পানি আদানির কাছ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। আদানি গ্রুপের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিল বকেয়া পড়েছে। কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে একটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে। ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে গেছে কয়লার অভাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত বছর উৎপাদনে আসে। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আনা ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা শেষ হয়ে গেছে। তাই ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য সিপিজিসিবিএল আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই আদেশ উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। নভেম্বর শেষ নাগাদ কয়লা আসতে পারে বলে আশা করছে সিপিজিসিবিএল।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ মুলধনী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ধুকছে বকেয়ার কারণে। দুটি ইউনিটের মধ্যে কয়লা অভাবে ১টি ইউনিট চালু রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কোম্পানিটির বিল বকেয়া পড়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তারল্য সংকটের কারণে এলসি খুলতে জটিলতায় ভূগছেন বলে জানা গেছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) দৈনিক উৎপাদন বিবরণীর জ্বালানি চিত্রে দেখা গেছে, সাশ্রয়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যয়বহুল ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বেশি চালাতে হচ্ছে। তারপরও লোডশেডিং বন্ধ করা যাচ্ছে না। ১ নভেম্বর সান্ধ্যকালীন পিকে ১২ হাজার ৩০২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। ওই দিন রাত ১টার দিকে ১৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে।
অন্যদিকে বিপিডিবির একটি সুত্র জানিয়েছে, এমনিতেই তারা লোকসানে রয়েছেন। এই অবস্থায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বেশি চালিয়ে লোকসান কমিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে যদি উল্টা বেড়ে যায় তাহলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে।
১ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় কিছুটা রক্ষে হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা কমে গেছে। যে কারণে উৎপাদন কমে গেলেও তুলনামূলক দুর্ভোগ কম হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল থাকায় চাহিদার পারদ থাকবে নিম্নমূখী। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ দিতে সেচ মৌসুম এবং রমজান একসঙ্গে বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হতে পারে। তার আগে সমস্যা সমাধান করা না গেলে বড় ধরণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়লা যখন এই সংকট তখন গ্যাসেও সুখবর নেই। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদনে ধ্বংস নেমেছে। কয়েক মাস ধরেই গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অর্ধেকের কম সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কোনটি স্থায়ীভাবে বসে থাকছে মাসের পর মাস।
মতামতের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম ও সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেনকে একাধিক দফায় ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।